নিজস্ব প্রতিনিধি : ময়মনসিংহের ঐতিহ্যবাহী জামিয়া ফয়জুর রহমান বড় মসজিদ মাদ্রাসায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ঘটনাস্থলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুরো নগরীতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) দুপুরে মাদ্রাসা সংলগ্ন এলাকায় পুলিশ সদস্যদের অবস্থান নিতে দেখা যায়।
এর আগে সোমবার (২৭ অক্টোবর) রাতে মাদ্রাসায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিবাদমান দুই পক্ষের মধ্যে স্থানীয় প্রশাসনের উপস্থিতিতে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে হঠাৎ করে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। এতে মাদ্রাসার শিক্ষক হাফেজ মো. শহীদুল্লাহ (৪৭) আহত হন। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে সেনাবাহিনী ও পুলিশ প্রশাসনের যৌথ হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
পরবর্তীতে মাদ্রাসা কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. মুফিদুল আলম এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে অনির্দিষ্টকালের জন্য মাদ্রাসা বন্ধ ঘোষণা করেন। তবে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত অমান্য করে মাদ্রাসার কার্যক্রম চালু রাখে। এ সময় দফায় দফায় বিক্ষোভ সমাবেশ করে শিক্ষার্থীরা। তারা মাদ্রাসার অস্থির পরিস্থিতির জন্য আহত শিক্ষক হাফেজ শহীদুল্লাহকে দায়ী করে তার বিচার দাবি জানায় এবং মাদ্রাসা কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্বে থাকা জেলা প্রশাসক মো. মুফিদুল আলমের পদত্যাগ দাবি করে।
মাদ্রাসার ভাইস প্রিন্সিপাল মুফতি মো. সারোয়ার হোসেন গনমাধ্যমকে বলেন, বর্তমানে মাদ্রাসার পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে এবং স্বাভাবিকভাবে পাঠদান চলছে। তিনি দাবি করেন, একটি পক্ষ প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে অভিযুক্ত শিক্ষক হাফেজ শহীদুল্লাহকে মাদ্রাসায় প্রবেশ করালে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এতে শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে এবং ধাক্কাধাক্কির সময় শহীদুল্লাহ কিছুটা আহত হন। বর্তমানে মাদ্রাসা এলাকায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
তবে এ বিষয়ে জানতে হাফেজ শহীদুল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি অসুস্থতার কারণে কথা বলতে না পারার কথা জানান। তার ছেলে আহাম্মারুল ইসলাম আহাম্মার জানান, আব্বু বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি আছেন, তিনি কথা বলতে পারবেন না।
কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শিবিরুল ইসলাম বলেন, বিবাদমান দুই পক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে। আশা করছি, দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। বর্তমানে মাদ্রাসার পরিবেশ শান্ত রয়েছে।
অন্যদিকে মাদ্রাসা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মো. মুফিদুল আলম জানান, ঘটনার প্রেক্ষিতে বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেখানে বিস্তারিত আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সূত্র জানায়, গত বছরের ২৭ অক্টোবর মাদ্রাসার শিক্ষক আজিজুল হকের বিরুদ্ধে চারিত্রিক, আর্থিক কেলেঙ্কারি, পরিবারতন্ত্র ও আধিপত্য বিস্তারের অভিযোগ ওঠে। এসব অভিযোগকে কেন্দ্র করে জেলা প্রশাসনের একাধিক তদন্ত কমিটি গঠিত হয়, তবে পক্ষে-বিপক্ষে মতভেদ দেখা দেয়। সেই থেকে মাদ্রাসায় দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ ও অস্থিরতা চলছিল। এরই ধারাবাহিকতায় সাম্প্রতিক এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।










