ধোবাউড়া প্রতিনিধি : ঢাকায় রাজমিস্ত্রীর সাথে যোগানদাতা হিসেবে কাজ করতেন মজিবর (৪০)। তার বাড়ি ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার গোয়াতলা ইউনিয়নের টাংগাটি গ্রামে। কিছুদিন আগে পায়ের গোঁড়ালিতে আঘাত পান তিনি। ঢাকায় একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে ফিরে আসেন।
এলাকায় এসে পায়ের ড্রেসিং করানোর জন্য গোয়াতলা বাজারের গ্রাম্য চিকিৎসক শফিকুল ইসলামের কাছে পরামর্শ জানতে যান। এরপরই শুরু হয় হাতুরে ডাক্তার শফিকুল ইসলামের কেরামতি।
প্রথম দিনেই ড্রেসিং ও গ্যাস্ট্রিক ট্যাবলেট, মলম এবং ব্যাথার ইনজেকশন দিয়ে পাঁয়ের গোঁড়ালির ক্ষত অংশে ড্রেসিংয়ের নামে শুরু হয় কাটাছেঁড়া। কাটাছেঁড়া করার সময় রোগীর চিৎকারে আশেপাশের দোকানের লোকজন এসে ভীড় জমায়। এভাবে চিকিৎসা শেষে বিল ধরিয়ে দেয় সাড়ে তিন হাজার টাকা। এভাবে দুইদিন পরপর ড্রেসিং এর নামে রোগীর পাঁেয়র কাটাছেঁড়া চলতে থাকে। এরপর থেকে চিকিৎসা বিল ২১ শত থেকে ২৩শত টাকা।
এভাবে কিছুদিন চলার পর কোন উন্নতি না হওয়ায় রোগীকে ধোবাউড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের হারবাল সহকারী আঃ মোতালেব এর কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেন গ্রাম্য চিকিৎসক শফিকুল। কিন্তু হারবাল সহকারী মোতালেব রোগীকে বলেন, হাসপাতালে এই চিকিৎসা হবেনা।
পরে রোগী মজিবর রহমান অন্যত্র চিকিৎসা করাতে চাইলে হুমকি ধমকি দিয়ে বাধা দেন হাতুড়ে ডাক্তার শফিক শফিকুল।
এদিকে, এক মাস চিকিৎসা করে রোগী সুস্থ্য হওয়ার বদলে বর্তমানে অবনতি হয়েছে। রোগীকে বিল ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে অর্ধলক্ষ টাকার অধিক। এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, গ্রাম্য চিকিৎসক শফিকুল ইসলাম এর কোন ডিগ্রি নেই। এর আগে সে স্বর্নের পুতুল বিক্রির নামে মানুষের কাছ থেকে প্রতারনা করে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। বিভিন্ন জায়গায় অপমানিত হয়ে পরে ফার্মেসীর ব্যবসা শুরু করেন।
এ ব্যাপারে রোগী মজিবর রহমান বলেন, আমার কাছে তেমন টাকা ছিলনা তাই শফিকুলের কাছে গিয়েছিলাম, সে আমাকে পঙ্গু করে দিয়েছে, পাঁ ভাল হয়নি এখন জমি বিক্রি করে তার টাকা দিতে হবে।
ধোবাউড়া হাসপাতালে কর্মরত আঃ মোতালেব বলেন, আমি রোগী মজিবরকে হাসপাতালে যেতে না করিনি। যেহেতু মজিবর রহমান ঢাকায় চিকিৎসা নিয়ে এসেছে এজন্য আমি বলেছি শফিকের দোকানে ড্রেসিংয়ে ভালো হবে। তিনি আরো বলেন, অনেক সময় রোগী মজিবর রহমানকে সরকারী ওষুধ দিয়ে সহায়তা করেছি।
এ ব্যাপারে গ্রাম্য চিকিৎসক শফিকুল ইসলাম বলেন, আমি মজিবরের কাছে অনেক আগে থেকে টাকা পাই। আমি সেই টাকা চাচ্ছি। রোগীর পায়ের সার্জিকেল করার বিষয়ে জানতে চাইলে এই বিষয়ে কোন কথা বলতে রাজি হননি।
গোয়াতলা ইয়নিয়নের চেয়ারম্যান জাকিরুল ইসলাম টুটন বলেন, সামান্য চিকিৎসায় ৫০ হাজার টাকা আমার কাছে অস্বাভাবিক মনে হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে অনেকেই আলোচনা করেছেন।
এ ব্যাপারে ধোবাউড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ অনিন্দিতা রায় বলেন, গ্রাম্য চিকিৎসক আপদকালীন যে রোগগুলো ঠান্ডা, জ্বর, কাশি, স্বর্দি এগুলোর চিকিৎসা করতে পারবে কোন সার্জিকেল বিষয়ে যেতে পারবেন না। যদি সার্জিকেল কিছু করে থাকেন তাহলে অবশ্যই ভুল করেছেন। এছাড়া রোগী সুস্থ্য না হলে অবশ্যই আমাদের হাসপাতালে পাঠাতে হবে।
এ ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী মজিবর রহমান।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিশাত শারমিন জানান,অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 
							
 
							
 
							
                        
 
							







