এম নজরুল ইসলাম : না ফেরার দেশে চলে গেলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক দেশের ‘জীবন্ত শহীদ বুদ্ধিজীবী’ ড. মজিবর রহমান (দেবদাস)। সোমবার (১৮ মে) বার্ধক্যজনিত কারণে জয়পুরহাটের মহুরুল গ্রামে নিজ বাসভবনে ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯০ বছর।
একুশে পদকপ্রাপ্ত বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের সাবেক অধ্যাপক মজিবর রহমান দেবদাস মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপি।
প্রতিমন্ত্রী এক শোকবার্তায় মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন।
শোকবার্তায় সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী জানান, 'বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মজিবর রহমান দেবদাস ব্যক্তিগত জীবনে ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী একজন মানুষ। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাক হানাদার বাহিনী দ্বারা নির্মম নির্যাতনে মানসিক ভারসাম্য হারানো মহান এ মুক্তিযোদ্ধাকে বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার যথাযথ সম্মান দেখিয়ে ২০১৫ সালে একুশে পদকে ভূষিত করে। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদান বাঙালি জাতি চিরকাল কৃতজ্ঞতার সহিত স্মরণ করবে।'
অন্য এক শোকবার্তায় সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল এনডিসি অধ্যাপক মজিবর রহমান দেবদাসের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তিনি মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
উল্লেখ্য, ১৯৩০ সালের ১ জানুয়ারি জয়পুরহাট জেলায় জন্মগ্রহণ করেন ড. মজিবুর রহমান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫২ সালে গণিতে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। তারপর করাচির সেন্ট্রাল সরকারি কলেজে যোগদানের মাধ্যমে তার অধ্যাপনা জীবনের শুরু। ১৯৬৪ সালে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন ইউনিভার্সিটি থেকে ফলিত গণিতে এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করে করাচির নাজিমাবাদ কলেজে যোগ দেন। পরে তিনি ১৯৬৭ সালের ১৬ অক্টোবর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত বিভাগে সিনিয়র লেকচারার হিসেবে যোগদান করেন।
স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসরদের গণহত্যা, তাণ্ডবলীলা, নির্মমতা, নিষ্ঠুরতা দেখে অধ্যাপক মজিবর রহমান অতিষ্ট হয়ে ওঠেন। ১৯৭১ সালের ১০ মে মজিবর রহমান তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পবিত্রতা নষ্ট এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে আর্মিদের ক্যাম্পে পরিণত করবার জন্য একটি ইংরেজিতে প্রতিবাদ লিপি দেন। মুসলমান হয়ে আর এক মুসলমানের ওপর পাকবাহিনীর নির্মমতা দেখে নিজের নাম পরিত্যাগ করে নতুন নাম ‘দেবদাস’ ধারণ করেন। প্রতিবাদ লিপিতে পূর্বের নাম উল্লেখসহ পরিবর্তিত নাম 'দেবদাস' উল্লেখ করেছিলেন।










