নিজস্ব প্রতিনিধি : বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) কম্বাইন্ড ডিগ্রির দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে ওঠেছে ক্যাম্পাস। গত ৩১ আগষ্ট রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগতদের হামলার প্রতিবাদ ও ছয় দফা দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো রেলপথ অবরোধ করে আন্দোলন করেছে শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একটি অংশ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের পূবালী ব্যাংকের শাখা এবং কোষাধ্যক্ষের কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন।

দুপুরের দিকে জব্বারের মোড় রেলপথ অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা রেলপথ অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এতে ঢাকা ময়মনসিংহ রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনার আশ্বাসে রেলপথ থেকে সরে যান তারা। বিকেল সাড়ে ৫টার রেলপথ থেকে এই অবরোধ প্রত্যাহার করা হয়। এতে ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।

এর আগে, এদিন দুপুর ১১টা ৫৫ মিনিটে বিক্ষোভ মিছিল করে রেলপথ অবরোধ করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এতে ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে সব ধরনের ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় রেললাইনে বসে ছয় দফা দাবির পক্ষে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

ময়মনসিংহ জিআরপি পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আকতার হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীদের অবরোধের কারণে বেলা ১১টা ৫৫ মিনিট থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত রেল চলাচল বন্ধ ছিল। এতে ময়মনসিংহ স্টেশনে বলাকা, ফাতেমা নগরে মহুয়া, আউলিয়া নগরে জামালপুর এক্সপ্রেস, গফরগাঁওয়ে অগ্নিবীনা এবং মশাখালী স্টেশনে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস আটকা পড়ে। এ ঘটনায় চরম যাত্রী ভোগান্তির সৃষ্টি হয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনার আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা অবরোধ থেকে সরে যাওয়ায় বিকেলে ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।

অপরদিকে, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ক্যম্পাসে পূবালী ব্যাংকের শাখা ও কোষাধ্যক্ষের কার্যালয়ে তালা দিয়ে দেয়। বেলা ১টার দিকে জব্বারের মোড় রেলপথ অবরোধের পর শিক্ষার্থীদের একটি অংশ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের পূবালী ব্যাংকের শাখা এবং নতুন প্রশাসনিক ভবনে অবস্থিত কোষাধ্যক্ষের কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন। এ সময় কর্মকর্তারা-কর্মচারীদের বের হওয়ার জন্য ১০ মিনিট সময় দেওয়া হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. হুমায়ূন কবীর বলেন, কোষাধ্যক্ষ কার্যালয় একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। সেখানে তালা দিয়ে শিক্ষার্থীরা আমাদের বের করে দিয়েছেন। এতে সবাইকে খুব সমস্যায় পড়তে হবে। শিক্ষার্থীরা আমাদের সঙ্গে যেমন আচার-আচরণ করছেন, তা অপ্রত্যাশিত।

আন্দোলররত শিক্ষার্থীরা জানান, আমাদের সব দাবি যৌক্তিক। কিন্তু দাবি আদায়ের কোনো লক্ষ্মণ দেখা যাচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে আমরা কঠোর আন্দোলনের দিকে যাচ্ছি। দাবি আদায় না হলে, শিক্ষার্থীরা আরও কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে এম ফজলুল হক ভূঁইয়া গনমাধ্যমকে বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবি নিয়ে এককভাবে আমার কিছু করার নেই। অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের জরুরি সভায় সুন্দর সিদ্ধান্ত হয়েছিল, কিন্তু শিক্ষার্থীরা তা না মেনে বিপথে হেঁটেছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে হল ছাড়ার নির্দেশনা না মেনে তারা আন্দোলন করছে। বিষয়টি এখন আমার নিয়ন্ত্রণে নেই, জেলা প্রশাসক যা ভালো মনে করবেন তাই হবে।

এদিকে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন রয়েছে। এ বিষয়ে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শিবিরুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ সতর্কভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে।

এছাড়াও, বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ৩১ আগস্ট একাডেমিক কাউন্সিলের সভা শেষে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা মিলনায়তনের সব প্রবেশপথ বন্ধ করে প্রায় আট ঘণ্টা উপস্থিত শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ রাখে। পরবর্তীতে ঘটে যাওয়া ভাঙচুরসহ অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের শনাক্ত ও সার্বিক বিষয়টি যাচাইয়ের জন্য ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে এম ফজলুল হক ভূঁইয়ার নির্দেশে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. হেলাল উদ্দীনের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

তদন্ত কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম সরদার। আর সদস্য সচিব করা হয়েছে সংস্থাপন শাখা-২ এর ডেপুটি রেজিস্ট্রার ড. মো. মঞ্জুর হোসেনকে। আদেশনামায় যত দ্রুত সম্ভব তদন্ত প্রতিবেদন বা সুপারিশ জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, ভেটেরিনারি ও পশুপালন অনুষদের ডিগ্রিকে একীভূত করে একটি কম্বাইন্ড ডিগ্রি দেওয়ার দাবিতে ২৫১ জন শিক্ষক কর্মকর্তাকে রোববার দিনভর অবরুদ্ধ করে রাখাকে কেন্দ্র করে বহিরাগতরা হামলা করে শিক্ষার্থীদের। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রোববার রাতে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ছাত্র-ছাত্রীদের সোমবার সকাল ৯টার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ প্রদান করা হয়।