নান্দাইল সংবাদদাতা : স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে গেলেও মুক্তিযুদ্ধের স্বীকৃতি মেলেনি নান্দাইল উপজেলার কাশিনগর গ্রামের আবুল হোসেনের (৭৫)। জীবন বাজি রেখে দেশের জন্য যুদ্ধ করা এই অকুতোভয় বীরমুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি নিয়ে মরতে চান। এজন্য তিনি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে সংক্লিষ্ট মন্ত্রী, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে একাধিক বার যোগাযোগ করেছেন।

আবুল হোসেন বলেন, মুক্তিযোদ্ধের সময় আমি বয়সে তরুণ। ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষন স্বশরীরে মঞ্চের কাছে উপস্থিত থেকে শুনেছি। বঙ্গবন্ধুর ওই ভাষন আমাকে যুদ্ধে যেতে সাহস যোগিয়েছে। ৮ই মার্চ বাড়িতে ফিরে কালীগঞ্জ বাজারে কাচারি থেকে ৫০ রাউন্ড গুলিসহ একটি অস্ত্র ছিনিয়ে নেই (অস্ত্র নং ১৭৮৭২)। মেজর হায়দার যখন পাক বাহিনীদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করতে শুভখিলা নরসুন্দা নদীর রেল ব্রিজ ও তারেরঘাট বাজারের ব্রিজ ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দেয় তখন অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে আমিও ছিলাম। ৪ এপ্রিল হবিগঞ্জ মাধবপুর তেলিয়াপাড়া চা বাগানে শপথ নিয়ে কমান্ডার হেলাল উদ্দিনের সঙ্গে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। মেজর জেনারেল আতাউল গণী ওসমানী আমাদের শপথ করিয়েছিলেন। আমাদের সেক্টর কমান্ডার ছিলেন মেজর আবু তাহের। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৮ই ডিসেম্বর হেলাল উদ্দিনের কাছে অস্ত্র জমা দিয়ে বাড়ি ফিরি। সে সময় আতাউল গণী ওসমানী স্বাক্ষরিত একটি সনদপত্র আমাকে প্রদান করা হয়। কিন্তু ৮০ দশকের দিকে ভারি বৃষ্টিতে ঘরে থাকা সনদপত্রটি পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে যায়। এরপর সনদটি পুনরায় সংগ্রহ করতে সংক্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ব্যর্থ হই।

তিনি বলেন, আমার কোনো পুত্র সন্তান নেই। স্ত্রী ও চার কন্যা সন্তান রয়েছে। কর্ম জীবনে অগ্রণী ব্যাংকের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী ছিলাম। বয়সের কারণে এখন স্মরণ শক্তি কমে গেছে। ১৯৬৬ সালে নান্দাইল থানা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ছিলাম। এলাকার মানুষ জানে আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি চাই। লাল-সবুজের জাতীয় পতাকা বুকে জড়িয়ে মরতে চাই।

কাশিনগর গ্রামের ইউপি সদস্য আব্দুল কাইয়ুম(৬০) বলেন, আমার জানা মতে আবুল হোসেন একজন অস্ত্রধারী বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। বিভিন্ন প্রকল্পে মুক্তিযোদ্ধা কোঠায় উনার নাম ব্যবহার করি।

নান্দাইল উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীরমুক্তিযোদ্ধা মাজারুল হক ফকির বলেন, বাদ পড়া মুক্তিযোদ্ধাদের বিষয়ে যাচাই বাচাইয়ের জন্য সরকার থেকে চিঠি আসছে। উনার বিষয়েও যাচাই হবে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবুল হোসেন বলেন, উনার সর্ম্পকে আমার জানা নেই। তবে উনি মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করতে পারেন।