নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি : গত বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সিট দখলকে কেন্দ্র করে এক মারাত্মক সংঘর্ষ ঘটে, যা ক্যাম্পাসে উত্তেজনার সৃষ্টি করে। এই সংঘর্ষের সময় সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে দুই সাংবাদিক হামলার শিকার হন।

এ সময় নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা আবু নাঈম আব্দুল্লাহ (যাযাবর নাঈম) ও তার অনুসারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকদের উপর হামলা চালায়। সাংবাদিকরা ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আজকের পত্রিকার প্রতিনিধি ফাহাদ বিন সাঈদ এবং যায়যায়দিন পত্রিকার প্রতিনিধি আহসান হাবিব রিয়াদ। তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে খবর সংগ্রহের চেষ্টা করলে, নাঈমের অনুসারীরা তাদের উপর আক্রমণ চালায়, যার ফলে উভয় সাংবাদিক গুরুতর আহত হন।

প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাদের অবস্থার অবনতি হলে, তাদের ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়।

এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা নেয় এবং তদন্তের জন্য একটি তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করে। তদন্ত কমিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট মাসুম হাওলাদার, ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দফতরের পরিচালক ড. মোহাম্মদ মেহেদী উল্লাহ এবং প্রক্টর সঞ্জয় কুমার মুখার্জি নিয়ে গঠিত হয়। তদন্তের পর, কমিটি নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ১৬ জন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করে।

২১ জানুয়ারি রেজিস্ট্রার দফতর সূত্রে জানানো হয়, এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ১৬ জন ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে শাস্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ৪ জনের সনদ বাতিল, ১ জনকে স্থায়ী বহিষ্কার, ২ জনের সনদ এক বছরের জন্য স্থগিত এবং ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করা হয়েছে। শাস্তি পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে সাবেক সহ-সভাপতি আবু নাঈম আব্দুল্লাহ (যাযাবর নাঈম), সাবেক উপ-কর্মসংস্থান বিষয়ক সম্পাদক জয় মোড়ল, সাবেক উপ-দফতর সম্পাদক লোবন মোখলেছ, ছাত্রলীগ নেতা তানভীর আহমেদ তুহিনসহ অন্যান্যরা রয়েছেন।

এছাড়া, আরও কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মীর সনদ এক বছরের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। এই শাস্তির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বার্তা দিয়েছে যে, কোনো ধরনের সহিংসতা বা শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন পদক্ষেপ শিক্ষার্থীদের মধ্যে শৃঙ্খলা বজায় রাখার এবং গণমাধ্যম কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার একটি বড় উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এই ঘটনার পর, প্রশাসন আরও সতর্ক থাকতে এবং ক্যাম্পাসে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে আরো পদক্ষেপ নিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।