ডেস্ক রিপোর্ট : ফুলবাড়িয়ায় ঐতিহ্যবাহী এই হুম ঘুঁটি খেলাটির বয়স আড়াই শ বছর। জমিদার আমল থেকে প্রতিবছর পৌষ মাসের শেষ দিন ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় অনুষ্ঠিত হয় এই হুম ঘুঁটি খেলা। সেই ধারাবাহিকতায় ১৪ই জানুয়ারি রোজ রোববার অনুষ্ঠিত হবে এর ২৬৫ তম আসর।

তুমুল জনপ্রিয় খেলাটির বয়স প্রায় ২৬৫ বছর। এটি স্থানীয়ভাবে এই খেলাটি ‘হুম ঘুঁটি’ ও ‘গুম ঘঁটি’ নামে পরিচিত। হুম ঘঁটি আসলে পিতলের তৈরী ৪০ কেজি ওজনের একটি গোলাকার বল। হুম ঘুঁটি খেলার সময় ও খেলোয়াড়ের সংখ্যা অনির্দিষ্ট। নেই কোনো রেফারিও। শত শত খেলোয়াড়ের মধ্যে আয়োজকরা নির্দিষ্ট একটা দলের হাতে হুম ঘুঁটি তুলে দেন। এরপর বারবার ঘুঁটির হাত বদল হয়। বিকেল থেকে শুরু হওয়া খেলা রাত পর্যন্ত চলে। খেলোয়াড়রা পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর, দক্ষিণ-চারটি ভাগ হয়ে যান। নিজ নিজ এলাকার দিক ঠিক রাখতে একেক দল বাঘ ,ষাঁড়ের ছবিসহ বিভিন্ন ছবি নিয়ে আলোকসজ্জা করে বাঁশের মাথায় বেঁধে নিয়ে আসে। যেদিকে ঘুঁটি যায় তার সামনে ওই দলের ‘দিক প্রতীক’ উঁচু করে রাখেন একেক সময় একেক জন। ঘণ্টায় ঘণ্টায় খেলার রূপ বদলায়। সবার মুখে একই আওয়াজ - আদা দিয়া ঘুঁটি ধররে ..হেইও হেইও। রাত হলে খেলার দৃশ্যপট পাল্টে যায়।

চারদিক থেকে হাজার হাজার মানুষের টর্চলাইটের আলোতে অসাধারণ দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। খেলোয়াড়রা খেলতে খেলতে ঘুঁটি তাদের অঞ্চলে নিয়ে যেতে চেষ্টা করেন। নিজ গ্রামে নিয়ে যেতে পারলে একসময় কৌশলে ঘুঁটিটি লুকিয়ে ফেলেন। যে গ্রামের খেলোয়াড়রা ঘুঁটি গুম করতে পারেন, তাঁরাই বিজয়ী হন।

আড়াই শ বছরেরও বেশি সময় আগের কথা। মুক্তাগাছার জমিদার শশীকান্ত আচার্য চৌধুরীর এবং বৈলরের জমিদার হেম চন্দ্র রায়ের জমির পরিমাপ নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়েছিল।

সমাধানকল্পে সিদ্ধান্ত হয় প্রজাদের শক্তি পরীক্ষার। শশীকান্ত আচার্য চৌধুরীর ‘পরগনা’ ও হোম চন্দ্র রায়ের ‘তালুক’ এর সীমান্তে আয়োজন করা হয় ৪০ কেজি ওজনের পিতলের ‘হুম ঘুঁটি’ খেলার। শক্তি ও কৌশলের মাধ্যমে খেলে বল আকৃতির হুম ঘুঁটি নিতে পারলে তারাই হবে বিজয়ী। শর্ত ছিল বিজয়ী দলের এলাকায় জমির পরিমাপ হবে সাড়ে ৬ শতাংশে এক কাঠা আর পরাজিত জমিদারের এলাকায় জমির পরিমাপ হবে ১০ শতাংশে এক কাঠা। পৌষ মাসের শেষ দিন ফুলবাড়িয়ার বড়ইআটা গ্রামে ঘুঁটি খেলার আয়োজন করা হয়। বিজয়ী হয় শশীকান্তের প্রজারা। জমিদার আমলের সেই শক্তি ও কৌশলের খেলা হুম ঘুঁটি এখনো চালু রয়েছে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায়। তবে সেই শর্ত এখন আর নেই। প্রতিবছর পৌষ মাসের শেষ বিকেলে আয়োজন করা হয় খেলাটির।

হুম ঘুঁটি স্মৃতি সংসদের সভাপতি নাট্যকার আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, হুম ঘুঁটি খেলা আমাদের ঐতিহ্য। মানুষ এটি খেলে নেহাত আনন্দের জন্য।